0
Orjun Chal

ভেষজশাস্ত্রে অর্জুন গাছের ব্যবহার অগনিত। সেই প্রাচীন কাল থেকে অর্জুন গাছ অনেক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বলা হয়ে থাকে বাড়িতে একটি অর্জুন গাছ থাকা আর একজন চিকিৎসক থাকা সমান কথা। ঔষধে অর্জুন গাছের পাতা, ছাল ও ফল ব্যবহৃত হয়। ইউনানী, আয়ুর্বেদ ও হোমিও শাস্ত্রে অর্জুনের ব্যবহার লক্ষনীয়। নিম্নে অর্জুন গাছের বিভিন্ন উপকারীতা নিয়ে আলোচনা করা হল :

১। হৃদরোগে: অর্জুনের বাকলে প্রচুর কো এনজাইম কিউ ১০ রয়েছে যা হৃদরোগ ও হার্ট এটাক প্রতিরোধ করে। অর্জূনের ছাল বেটে খেলে হৃৎপিন্ডের পেশী শক্তিশালী হয়। হৃৎপিন্ডের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এটি রক্তের কোলষ্টেরল কমায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

২। বুক ধরফড়ানি: যাদের বুক ধড়ফড় করে অথচ রক্তচাপ নেই, তাদের পক্ষে অর্জুন ছাল কাঁচা হলে ১০-১২ গ্রাম, শুকনো হলে ৫-৬ গ্রাম একটু ছেঁচে ২৫০ মিলি দুধ ও ৫০০ মিলি পানির সাথে মিশিয়ে জ্বাল দিতে হবে। আনুমানিক ১২৫ মিলি থাকতে নামিয়ে ছেঁকে বিকাল বেলা খেলে বুক ধড়ফড়ানি কমে যাবে। খেয়াল রাখতে হবে পেটে যেন বায়ু না থাকে।

৩। ব্রণ সারাতে: কারো ব্রণ হলে বাকল চূর্ণ মধুর সাথে মিশিয়ে লাগালে দ্রুত ব্রণ ভাল হয়ে যায়।
৪। লিভার সিরোসিসে: ফল চূর্ণ লিভার সিরোসিসে টনিক হিসাবে কাজ করে।
৫। উচ্চ রক্তচাপে: ফল চূর্ণ রক্তচাপ কমায়, মূত্র বর্ধন করে।
৬। শরীরে ক্ষত: অর্জুনের ছাল বেটে শরীরের ক্ষত, খোসপাঁচড়ায় লাগালে ভালো হয়ে যায়।
৭। মুখের ব্যাথায়: অর্জুনের ছাল মুখ, জিহবা ও মাড়ির ব্যাথায় ব্যবহৃত হয়। এটি মাড়ির রক্তপড়া বন্ধ করে ।
৮। হজম শক্তি বাড়াতে: অর্জুনের ছাল খাদ্য হজম ক্ষমতা বাড়ায় এবং খাদ্যতন্ত্রের ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।

৯। ক্যান্সারে: অর্জুনের ছাল ক্যান্সার কোষের বর্ধন রোধ করে।
১০। যৌন রোগে: চর্ম ও যৌন রোগে অর্জুন ব্যবহৃত হয়। যৌন উদ্দীপনা বাড়াতে অর্জুন ছালের রস সাহায্য করে।
১১। জ্বর নিরাময়ে: অর্জুনের ছাল জ্বর নিবারক হিসেবেও কাজ করে।
১২। হাপানী রোগে: অর্জুনের ছাল হাপানী রোগেও উপকারী। ফলের শুকনো টুকরো কলকেতে নিয়ে তামাকের মত টানতে হয়।
১৪ পেটের অসুবিধায়: অর্জুন ছালের রস পেট ফাঁপা, বদহজম, অগ্নিমন্দা জাতীয় অসুবিধায় ব্যবহার করা হলে বায়ু নাশ করে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।

১৫। রক্ত পড়া বন্ধে: কাটা ঘায়ের রক্ত স্রাব বন্ধের জন্য ছাল বেটে প্রলেপ দিলে বা রস দিলে বা ফলের চুর্ণ ক্ষতস্থানে লাগালে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।

১৬। হাড় ভাঙ্গায়: হাড় ভেঙ্গে গেলে ছাল বেটে প্রলেপ দিলে ভাঙ্গা ভাল হয়ে যায়। অস্থি যৌগিক হলে অর্জুন ছাল, রসুন এবং হাড়জোড়া একত্রে বেটে প্রলেপ দিলে দ্রুত ভাল হয়ে যায়। তবে প্রলেপ দেওয়ার পূর্বে ভাঙ্গা অস্থিগুলোকে যথাস্থানে পুনঃস্থাপন করে নিতে হবে।

১৭। শ্বেত পদরে: শ্বেত বা রক্ত পদরে অর্জুনের ছাল ভিজানো পানি আধ চামচ কাঁচা হলুদের রস মিশিয়ে খেলে রোগ ভাল হয়।

১৮। ক্ষয় কাশে: ক্ষয় কাশে অর্জুনের ছালের গুড়া বাসক পাতার রসে ভিজিয়ে ঘি ও মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

১৯। দুর্বলতায়: সাধারণ দুর্বলতা ও হৃদপিন্ডের দুর্বলতায় ৩-৪ গ্রাম অর্জুন ছাল চূর্ণ প্রতিদিন দুইবার একগ্লাস দুধ সহ সেব্য। একমাস সেবন করা আবশ্যক।
২০। রক্ত আমাশয়ে: কাঁচা অর্জুনের ছাল ৫ গ্রাম পরিমাণ নিয়ে ভালভাবে পিষে ঠান্ডা পানি সহ দিনে ২ বার খেলে রক্ত আমাশয়ে উপকার হয়।

২১। প্রমেহ সারাতে: ২০ গ্রাম আধাচূর্ণ অর্জুন ছাল নিয়ে ২ কাপ পরিমাণ পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরবর্তীতে জ্বাল দিয়ে এককাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে প্রতিদিন ২-৩ বার সেবন করলে প্রমেহ রোগ ভাল হয়।

Leave a Reply

0